Monday, 28 November 2011

বিশ্ব এইডস দিবস ২০১১-এ বিএনপিএস-এর লিফলেট


এইডস প্রতিরোধে তপর হোন
এইচআইভি সংক্রমণ, সংক্রমিত ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য এবং
এইডসসংক্রান্ত মৃত্যু শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনুন
এ বছরের বিশ্ব এইডস দিবসের (পহেলা ডিসেম্বর ২০১১) আহ্বান : এইচআইভি সংক্রমণ, সংক্রমিত ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য এবং এইডসসংক্রান্ত মৃত্যু শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা’ (Getting to Zero - Zero New HIV Infections. Zero Discrimination and Zero AIDS-Related Deaths)এসব ক্ষেত্রে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানোই এই স্লোগানের উদ্দেশ্যএইডস সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করা, এইডসআক্রান্তদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বাড়ানো এবং বিশ্ব পর্যায়ে এইডসসংক্রান্ত সামাজিক ও স্বাস্থ্য সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করার জন্য ১৯৮৮ সাল থেকে পৃথিবীব্যাপী বিশ্ব এইডস দিবস পালিত হয়ে আসছেসকলের জন্য চিকিসার সম-সুযোগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে সকল দেশকে এইডস রোগ প্রতিরোধে অঙ্গীকারাবদ্ধ করে তোলার মধ্যেই এই দিবসের তাপর্য নিহিত। 
প্রতিদিন বিশ্বের প্রায় ৭১০০ মানুষ এইচআইভি-সংক্রমিত হয় এবং ৪৯০০ মানুষ এইচআইভি/এইডস-এ আক্রান্ত হয়ে মারা যায়বর্তমানে বিশ্বে তিন কোটি মানুষ এইডস-সংক্রমণ নিয়ে বেঁচে আছেএইডসআক্রান্ত অধিকাংশ মানুষই নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে বসবাস করেবিশেষ করে, আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে এইডস মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে, যেখানে ১৫-২৪ বছর বয়সী নারীরা ভয়াবহভাবে এইচআইভি-সংক্রমণের শিকার হয়েছে
এইডসআক্রান্ত ব্যক্তিদের সুচিকিসা এখনো সোনার হরিণএক্ষেত্রে প্রথম বাধা রোগ চিহ্নিত হওয়া এবং সামাজিক সংস্কার দূর করে চিকিসা নিতে এগিয়ে আসাএরপর রয়েছে চিকিসার ব্যয়বহুলতার বিষয়টি, যা দরিদ্র দেশের আক্রান্তব্যক্তিদের একটা বড়ো অংশকেই চিকিসা থেকে দূরে রাখেউন্নত বিশ্বে চিকিসার সহজলভ্য সুবিধা থাকলেও দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটি এখনো একটি বড়ো চ্যালেঞ্জ
এইডসআক্রান্ত মানুষের প্রতি সমাজে একটি মর্যাদাপূর্ণ ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা প্রয়োজনকিন্তু বিশ্বের ৮৪টি দেশে রোগটির প্রতিরোধ এবং আক্রান্তদের চিকিসা, সেবা ও সহায়তা দানের ক্ষেত্রে বৈরী অবস্থা বিরাজ করছে৫৯টি দেশে চিকিসাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধা রয়েছেতাছাড়া এইডসআক্রান্ত ব্যক্তিরা চলাচল ও জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে বৈষম্য ও প্রতিবন্ধকতার শিকার হন
বাংলাদেশে এইচআইভি/এইডস সংক্রমণের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হলেও আমরা ঝুঁকিমুক্ত নইসর্বশেষ সরকারি হিসেব অনুযায়ী ১৯৮৯ সালে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এইচআইভি পজিটিভের সংখ্যা ২০৮৮ জন, এইডসআক্রান্তের সংখ্যা ৮৫০ জন, যার মধ্যে মারা গেছেন ২৪১ জনআমরা সচেতন না-হলে ভবিষ্যতে আমাদের দেশেও এইডসের বিস্তার ভয়াবহতার মাত্রায় পৌঁছে যেতে পারে
আমাদের দেশে এইডস রোগী শনাক্ত করা বেশ কঠিনকেননা এইচআইভি ভাইরাসের উপস্থিতি প্রমাণের জন্য এখানে রক্ত পরীক্ষার সুযোগ যথেষ্ট নয়সরকারি হিসেব মতে, দেশে এইচআইভি পরীক্ষার জন্য ৯৬টি ভলান্টারি কাউন্সেলিং অ্যান্ড টেস্টিং কেন্দ্র রয়েছেএসব কেন্দ্রে  রক্তে এইচআইভি ভাইরাস আছে কি না তা বিনামূল্যে পরীক্ষা করা হয়কেন্দ্রসমূহ পরিচালনা করে থাকে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাএসব কেন্দ্র মূলত নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর প্রতি মনোযোগী; যেমন কিছু কেন্দ্রে যৌনকর্মী ও কিছু কেন্দ্রে হিজড়াদের রক্ত পরীক্ষা করা হয়সাধারণ মানুষের জন্য এরকম কেন্দ্রের সংখ্যা খুব কমতাছাড়া এই কেন্দ্রগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের মতো বিশেষ কয়েকটি অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ
এইডসআক্রান্তদের চিকিসা দেওয়ার ক্ষেত্রেও আমরা পিছিয়ে আছিরক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এইচআইভি-সংক্রমণ চিহ্নিত হলে রোগীকে নিয়মিত এআরভি (এন্টিরেট্রোভাইরাল) ওষুধ দিতে হয়এই ওষুধ খুবই ব্যয়বহুল, যেজন্য বিশেষায়িত গ্রপ হিসেবে সুবিধাপ্রাপ্তদের বাইরে চিকিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে এইডসআক্রান্ত সাধারণ দরিদ্ররা বৈষম্যের শিকার হনআমরা মনে করি, এইডসআক্রান্তদের চিকিসার দায়িত্বটি সরকার গ্রহণ করলে এসব সমস্যা থেকে সহজেই উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব
এইচআইভি/এইডস সংক্রমণের বাস্তবতাগুলো আমাদের সমাজেও বিরাজমানমাদকসেবন, যৌনব্যবসায়, সাময়িকভাবে বিদেশে অবস্থান, অনিরাপদ রক্ত সঞ্চালন, দারিদ্র্য, পর্যাপ্ত শিক্ষা ও চিকিসা সেবার অভাব ছাড়াও আরো অনেক মৌলিক বিষয় রয়েছে, যা এ ধরনের রোগের বিস্তারে সহায়তা করে ও প্রতিরোধে বাধা হয়ে দাঁড়ায়
এইডসআক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে নারী-পুরুষ উভয়েরইদেশে প্রকট জেন্ডার বৈষম্য বিদ্যমান থাকায় নারীরা আক্রান্ত হবার আশঙ্কায় পুরুষের তুলনায় বেশি ভুগছেআক্রান্ত নারী পরিবারে, সমাজে সর্বত্র সন্দেহের শিকারে পরিণত হনপরম আপনজনও তাদের দূরে ঠেলে দেয়এছাড়া অতি দরিদ্র, ক্ষমতাহীন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন, নারীদের এইডসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি এবং তাদের পরিণতি হয় আরো ভয়াবহসমাজে নারীদের অধস্তন অবস্থান, নারীসহ অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতাহীনতা ও মানবাধিকারবঞ্চনা এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে যেকোনো জাতীয় উদ্যোগের সফলতার পথে বড়ো প্রতিবন্ধক
এই পরিস্থিতি ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে এইচআইভি/এইডসের সংক্রমণ, রোগীদের প্রতি বৈষম্য এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যু শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার জন্য জরুরি করণীয়সমূহ হতে পারে নিম্নরূপ :
-                     প্রতিরোধই হচ্ছে এইডস থেকে রক্ষা পাবার সর্বোত্তম উপায়এইচআইভি ভাইরাস যাতে আক্রমণ করতে না-পারে, সেজন্য নিরাপদ ও বিশ্বস্ত যৌনসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে
-                     জরুরি মুহূর্তে শরীরে রক্ত গ্রহণের আগে স্ক্রিনিং টেস্টের মাধ্যমে দানকৃত রক্তে এইচআইভি ভাইরাস আছে কি না তা পরীক্ষা করে নেওয়া প্রয়োজনএক্ষেত্রে সকল সরকারি হাসপাতালে এইচআইভি/এইডস শনাক্তকরণ সুবিধাসহ চিকিসাসেবা সহজলভ্য করতে হবে
-                     মাদক গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে সিরিঞ্জ দিয়ে মাদক গ্রহণ পরিহার করতে হবেযারা এখনো পরিহার করতে পারছেন না তাদের একাধিকজনের একই সিরিঞ্জ ব্যবহার করার প্রবণতা রোধ করতে হবে। 
-                     এইডস প্রতিরোধে সচেতনতাই সবচেয়ে বড়ো অস্ত্রস্কুল পর্যায় থেকে জাতীয় কারিকুলামের আওতায় এইচআইভি/এইডস, প্রজননস্বাস্থ্য ও যৌনস্বাস্থ্যসংক্রান্ত শিক্ষা ও সচেতনতা প্রদান করতে হবেউন্নয়নকর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে কমিউনিটি পর্যায়েও সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে
-                     আমাদের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরীপ্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ে তাদের সচেতন করার মাধ্যমে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে এইচআইভি/এইডসসহ বিভিন্ন যৌনরোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে