শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কুখ্যাত গোলাম আযমের গ্রেফতারে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের নাগরিকদের ৪০ বছরের প্রত্যাশার একাংশ পূর্ণ হলো। মুষ্টিমেয় কিছু যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের সমর্থকরা ছাড়া বাংলাদেশের আমজনতার সবাই এই কুখ্যাতদের বিচারের পক্ষে।
গ্রেফতারের দিন গত বুধবার টেলিভিশনের সন্ধ্যার খবরে শুনলাম, গোলাম আযমের আইনজীবীদের পক্ষে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলছেন, তাকে জামিন না-দিয়ে, তার পক্ষে আপিলের অনুমতি না-দিয়ে তার সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। তিনি বলছেন, দেশের নাগরিক হিসেবে চোর-গুন্ডা-বদমাশ সবারই সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। তবে, এই তালিকায় তিনি ‘কসাই’ শব্দটি বলেন নি! আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না, গোলাম আযমকে তিনি উল্লিখিতদের মধ্যকার কোন ধরনের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করলেন?
লক্ষণীয় যে, ব্যারিস্টার রাজ্জাক তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে স্বীকার করেছেন যে, এদেশে একটি সংবিধান আছে, সেই সংবিধানের দৃষ্টিতে সব মানুষের সমান অধিকার আছে। গোলাম আযমকে রক্ষার জন্য হলেও তিনি সব মানুষের সাংবিধানিক অধিকারের শরণাপন্ন হয়েছেন, যেটা গোলাম আযমরা হরহামেশাই অস্বীকার করেন।
কথা হলো, যার জন্য তিনি সাংবিধানিক অধিকারের দাবি তুলছেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর সমস্ত অপকর্ম সমর্থন করেছেন, তাদের সেসব কাজ সংগঠিত করার জন্য ভূমিকা রেখেছেন ও সর্বপ্রকার সহযোগিতা দিয়েছেন, নিজে তার অনুসারীদেরসহ মানবতাবিরোধী শাস্তিযোগ্য কর্মে জড়িত হয়েছেন, যার ভুরি ভুরি বাস্তব প্রমাণ আছে। তার ও তার দলের আরো অনেকের এ ধরনের অপরাধ বিষয়ে দেশের নাগরিকদের মধ্যে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই।
গোলাম আযম যে দলের প্রাক্তন আমির, সে দল জামায়াতে ইসলামীর ঘোষিত নীতি হচ্ছে যে, তারা মানুষের প্রণীত কোনো আইনে বিশ্বাস করে না। এজন্য তারা দেশে আল্লাহর আইন তথা ইসলামি আইন চালু করতে চান। তাদের অজস্র বক্তৃতা-বিবৃতি-ক্যাসেট-সিডি থেকেই তাদের প্রত্যাশিত আল্লাহর আইনের প্রতি অনুরক্তির কথা আমরা অহরহ শুনে থাকি।
আমরা জানি, তারা তাদের রাজনৈতিক ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সৌদি সহায়তা পান। পাশাপাশি তারা ইসলামি বা আল্লাহর আইনের নামে এদেশে সৌদি আইন চালু করতে চান। যদি তাই চান, তাহলে এখানে আরেকটা দৃশ্যের কথা মনে হয়। গোটা দেশবাসী গণমাধ্যমসূত্রে দেখেছে, গত অক্টোবরে ৮ বাংলাদেশি নাগরিককে সৌদি আইনে প্রকাশ্য রাজপথে শিরচ্ছেদের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে, যাদের অপরাধ গোলাম আযমের অপরাধের তুলনায় তুচ্ছ।
সবাই জানে, সৌদি আরবে তাদের বর্ণিত কোরানিক আইন তথা ইসলামিক আইন প্রচলিত আছে, যেখানে চুরির মতো তুচ্ছ অপরাধেও হাত কেটে ফেলার বিধান আছে। গোলাম আযমের অপরাধের যে ব্যাপকতা, তাতে সেই কথিত ইসলামি আইন অনুযায়ী বহু আগেই ঢাকার রাজপথে জনসমক্ষে তার শিরচ্ছেদ হবার কথা ছিল। বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের কথা তুলে তারা তাদের এই ইসলামি বিধান লঙ্ঘন করছেন কি না, এ প্রশ্নের তারা কী উত্তর দেবেন?
যারা সংবিধান মানে না, নারী ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অধিকার স্বীকার করে না, বরং নারী ও প্রগতিশীল মানুষ এবং আইনের বিরুদ্ধে জেহাদ করে, বোমা মারে, তাদের আইনজীবীর মুখে সংবিধানকে সাক্ষী মেনে এ ধরনের কথা মানায় না। তাতে তাদের কথা ও কার্যকলাপের মধ্যকার বিস্তর ফারাকটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সংবিধানের মৌলিক নীতি যারা মানে না, তারা স্পষ্টত রাষ্ট্রদ্রোহী। তাদের আন্তর্জাতিক মানের আইনি অধিকার পাওয়ার অধিকার থাকতে পারে না। একাত্তরে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুষ্ঠনের মাধ্যমে তারা মানবতাবিরোধী যেসব অপরাধ করেছে, এসব অপরাধের যারা ভুক্তভোগী, যারা হারিয়েছেন তাদের মা-বাবা-ভাই-বোন-আত্মীয়পরিজন, বাড়িঘর-সম্পদ-- তাদের সুবিচার পাবার অধিকার তো চল্লিশ বছর ধরেই লঙ্ঘিত হয়ে চলেছে। এখানে এসে আমার প্রশ্ন যে, কোনটা আগে বিবেচ্য হওয়া উচিত-- যুদ্ধাপরাধীর অধিকার নাকি ভুক্তভোগীদের সুবিচার পাওয়ার অধিকার?
বাংলার মানুষ যে ধরনের একটি দেশের স্বপ্ন নিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছিল, গোলাম আযমের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গোষ্ঠীর তৎপরতা সেরকম দেশ ও সমাজ প্রতিষ্ঠার অন্তরায়। তারা দেশ ও মানুষের যেকোনোরকম অগ্রসরমানতাকে ঠেকিয়ে রেখে প্রকারান্তরে তাকে আরো পেছন দিকে ঠেলে দিতে চায়। অপরাধ তারা একাত্তরে করেছে, করেছে একাত্তরের পরেও এবং এখনো তারা একই ধরনের তৎপরতায় লিপ্ত। তারা ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও নারীর সমানাধিকার না-মেনে সংবিধানের মৌলনীতি লঙ্ঘন করে চলেছে। যাদের জন্য এদেশের জনগোষ্ঠীর ৫০ ভাগ নারী উত্তরাধিকার ও পারিবারিক ক্ষেত্রে সমানাধিকার থেকে এখনো বঞ্চিত, যারা এদেশে প্রগতিশীল শিক্ষানীতি প্রণয়নে বাধা সৃষ্টি করে, যারা ছায়ানটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে বাধার সৃষ্টি করেছিল বিগত জোট সরকারের আমলে, যারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রগকাটা, হত্যা, বোমাবাজি ইত্যাদির হোতা, তাদের জন্য বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিয়ে যারা অস্থির হয়ে পড়েছেন, তারা এ দেশের সাধারণ জনগণের ন্যায্য অধিকার ও সুবিচার পাওয়ার অধিকার নিয়ে কেন সোচ্চার হচ্ছেন না-- এ প্রশ্ন তাদের ভূমিকাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে ধারণা দেয়। কাজেই যথাসম্ভব দ্রুত গোলাম আযমসহ গ্রেফতারকৃত ও গ্রেফতারের বাইরে থাকা সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার কার্যকর করে দেশকে রাহুমুক্ত করবার কোনো বিকল্প নেই, যদি আমরা সত্যিই এই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। দেশের স্বজনহারা, সম্পদহারা, শারীরিকভাবে নির্যাতিত ও শরণার্থীর জীবনযাপনে বাধ্য হওয়া মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে মানবতাবিরোধী এই অপরাধীদের বিচারদৃশ্য দেখবার জন্য। ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষের বিচার পাবার অধিকারকে নিশ্চয়ই আমরা লঙ্ঘন করতে পারি না।
গ্রেফতারের দিন গত বুধবার টেলিভিশনের সন্ধ্যার খবরে শুনলাম, গোলাম আযমের আইনজীবীদের পক্ষে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলছেন, তাকে জামিন না-দিয়ে, তার পক্ষে আপিলের অনুমতি না-দিয়ে তার সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। তিনি বলছেন, দেশের নাগরিক হিসেবে চোর-গুন্ডা-বদমাশ সবারই সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। তবে, এই তালিকায় তিনি ‘কসাই’ শব্দটি বলেন নি! আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না, গোলাম আযমকে তিনি উল্লিখিতদের মধ্যকার কোন ধরনের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করলেন?
লক্ষণীয় যে, ব্যারিস্টার রাজ্জাক তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে স্বীকার করেছেন যে, এদেশে একটি সংবিধান আছে, সেই সংবিধানের দৃষ্টিতে সব মানুষের সমান অধিকার আছে। গোলাম আযমকে রক্ষার জন্য হলেও তিনি সব মানুষের সাংবিধানিক অধিকারের শরণাপন্ন হয়েছেন, যেটা গোলাম আযমরা হরহামেশাই অস্বীকার করেন।
কথা হলো, যার জন্য তিনি সাংবিধানিক অধিকারের দাবি তুলছেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর সমস্ত অপকর্ম সমর্থন করেছেন, তাদের সেসব কাজ সংগঠিত করার জন্য ভূমিকা রেখেছেন ও সর্বপ্রকার সহযোগিতা দিয়েছেন, নিজে তার অনুসারীদেরসহ মানবতাবিরোধী শাস্তিযোগ্য কর্মে জড়িত হয়েছেন, যার ভুরি ভুরি বাস্তব প্রমাণ আছে। তার ও তার দলের আরো অনেকের এ ধরনের অপরাধ বিষয়ে দেশের নাগরিকদের মধ্যে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই।
গোলাম আযম যে দলের প্রাক্তন আমির, সে দল জামায়াতে ইসলামীর ঘোষিত নীতি হচ্ছে যে, তারা মানুষের প্রণীত কোনো আইনে বিশ্বাস করে না। এজন্য তারা দেশে আল্লাহর আইন তথা ইসলামি আইন চালু করতে চান। তাদের অজস্র বক্তৃতা-বিবৃতি-ক্যাসেট-সিডি থেকেই তাদের প্রত্যাশিত আল্লাহর আইনের প্রতি অনুরক্তির কথা আমরা অহরহ শুনে থাকি।
আমরা জানি, তারা তাদের রাজনৈতিক ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সৌদি সহায়তা পান। পাশাপাশি তারা ইসলামি বা আল্লাহর আইনের নামে এদেশে সৌদি আইন চালু করতে চান। যদি তাই চান, তাহলে এখানে আরেকটা দৃশ্যের কথা মনে হয়। গোটা দেশবাসী গণমাধ্যমসূত্রে দেখেছে, গত অক্টোবরে ৮ বাংলাদেশি নাগরিককে সৌদি আইনে প্রকাশ্য রাজপথে শিরচ্ছেদের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে, যাদের অপরাধ গোলাম আযমের অপরাধের তুলনায় তুচ্ছ।
সবাই জানে, সৌদি আরবে তাদের বর্ণিত কোরানিক আইন তথা ইসলামিক আইন প্রচলিত আছে, যেখানে চুরির মতো তুচ্ছ অপরাধেও হাত কেটে ফেলার বিধান আছে। গোলাম আযমের অপরাধের যে ব্যাপকতা, তাতে সেই কথিত ইসলামি আইন অনুযায়ী বহু আগেই ঢাকার রাজপথে জনসমক্ষে তার শিরচ্ছেদ হবার কথা ছিল। বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের কথা তুলে তারা তাদের এই ইসলামি বিধান লঙ্ঘন করছেন কি না, এ প্রশ্নের তারা কী উত্তর দেবেন?
যারা সংবিধান মানে না, নারী ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অধিকার স্বীকার করে না, বরং নারী ও প্রগতিশীল মানুষ এবং আইনের বিরুদ্ধে জেহাদ করে, বোমা মারে, তাদের আইনজীবীর মুখে সংবিধানকে সাক্ষী মেনে এ ধরনের কথা মানায় না। তাতে তাদের কথা ও কার্যকলাপের মধ্যকার বিস্তর ফারাকটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সংবিধানের মৌলিক নীতি যারা মানে না, তারা স্পষ্টত রাষ্ট্রদ্রোহী। তাদের আন্তর্জাতিক মানের আইনি অধিকার পাওয়ার অধিকার থাকতে পারে না। একাত্তরে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুষ্ঠনের মাধ্যমে তারা মানবতাবিরোধী যেসব অপরাধ করেছে, এসব অপরাধের যারা ভুক্তভোগী, যারা হারিয়েছেন তাদের মা-বাবা-ভাই-বোন-আত্মীয়পরিজন, বাড়িঘর-সম্পদ-- তাদের সুবিচার পাবার অধিকার তো চল্লিশ বছর ধরেই লঙ্ঘিত হয়ে চলেছে। এখানে এসে আমার প্রশ্ন যে, কোনটা আগে বিবেচ্য হওয়া উচিত-- যুদ্ধাপরাধীর অধিকার নাকি ভুক্তভোগীদের সুবিচার পাওয়ার অধিকার?
বাংলার মানুষ যে ধরনের একটি দেশের স্বপ্ন নিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছিল, গোলাম আযমের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গোষ্ঠীর তৎপরতা সেরকম দেশ ও সমাজ প্রতিষ্ঠার অন্তরায়। তারা দেশ ও মানুষের যেকোনোরকম অগ্রসরমানতাকে ঠেকিয়ে রেখে প্রকারান্তরে তাকে আরো পেছন দিকে ঠেলে দিতে চায়। অপরাধ তারা একাত্তরে করেছে, করেছে একাত্তরের পরেও এবং এখনো তারা একই ধরনের তৎপরতায় লিপ্ত। তারা ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও নারীর সমানাধিকার না-মেনে সংবিধানের মৌলনীতি লঙ্ঘন করে চলেছে। যাদের জন্য এদেশের জনগোষ্ঠীর ৫০ ভাগ নারী উত্তরাধিকার ও পারিবারিক ক্ষেত্রে সমানাধিকার থেকে এখনো বঞ্চিত, যারা এদেশে প্রগতিশীল শিক্ষানীতি প্রণয়নে বাধা সৃষ্টি করে, যারা ছায়ানটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে বাধার সৃষ্টি করেছিল বিগত জোট সরকারের আমলে, যারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রগকাটা, হত্যা, বোমাবাজি ইত্যাদির হোতা, তাদের জন্য বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিয়ে যারা অস্থির হয়ে পড়েছেন, তারা এ দেশের সাধারণ জনগণের ন্যায্য অধিকার ও সুবিচার পাওয়ার অধিকার নিয়ে কেন সোচ্চার হচ্ছেন না-- এ প্রশ্ন তাদের ভূমিকাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে ধারণা দেয়। কাজেই যথাসম্ভব দ্রুত গোলাম আযমসহ গ্রেফতারকৃত ও গ্রেফতারের বাইরে থাকা সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার কার্যকর করে দেশকে রাহুমুক্ত করবার কোনো বিকল্প নেই, যদি আমরা সত্যিই এই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। দেশের স্বজনহারা, সম্পদহারা, শারীরিকভাবে নির্যাতিত ও শরণার্থীর জীবনযাপনে বাধ্য হওয়া মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে মানবতাবিরোধী এই অপরাধীদের বিচারদৃশ্য দেখবার জন্য। ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষের বিচার পাবার অধিকারকে নিশ্চয়ই আমরা লঙ্ঘন করতে পারি না।