Thursday 14 July 2011

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ধর্ষক-শিক্ষক পরিমল জয়ধর এবং বদরগঞ্জের নির্যাতক সালিশকার ইউপি চেয়ারম্যানসহ সম্প্রতি সংঘটিত সকল নারী নির্যাতন ঘটনার অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের অবস্থানপত্র

ভিআইপি হল, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা। ১৪ জুলাই ২০১১

প্রিয় সাংবাদিক বোন ও ভাইয়েরা,
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)-এর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানবেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি, সালিশের নামে নির্যাতন, যৌতুকের নামে হত্যা এবং পারিবারিক নির্যাতনসহ নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ জানাতে এবং এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য ও দাবিসমূহ তুলে ধরার জন্য আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন বিএনপিএস নির্বাহী পরিচালক নারীনেত্রী রোকেয়া কবীর। পাশে উপবিষ্ট (ডানে) বিএনপিএস কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী কনকচাঁপা চাকমা ও বিএনপিএস পরিচালক ওমর তারেক চৌধুরী এবং (বামে) বিএনপিএস উপপরিচালক শাহনাজ সুমী ও অ্যাডভোকেসি সমন্বয়কারী দিলারা রেখা

প্রিয় বন্ধুগণ,
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখার শিক্ষক পরিমল জয়ধর কর্তৃক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও নিপীড়ন এবং নিপীড়নের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করেছি যে, এ ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষ নিপীড়িত ছাত্রীকে উপযুক্ত সহায়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। গণমাধ্যমসূত্রে আমরা আরো অবগত হয়েছি, পরিমল ছাড়াও একই শাখার আরো চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে। আমরা ধর্ষক পরিমল, এ কাজে প্রশ্রয়দানকারী কর্তৃপক্ষ এবং অভিযুক্ত অন্য চার শিক্ষকসহ সকল অপরাধীকে আইনানুগ বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

সম্প্রতি ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আখাউড়ায় শিক্ষক দ্বারা শিক্ষার্থী নিপীড়নের আরেকটি ঘটনার খবর কাগজে প্রকাশিত হয়েছে। স্কুলের শ্রেণিকক্ষে ঢুকে যৌন নিপীড়নকারী ওই শিক্ষক ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। আমরা শিক্ষকের বেশধারী এই নিপীড়কেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির ঘটনা নতুন কিছু নয়। ঠিকমতো অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অহরহই নানামাত্রায় যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে চলেছে। মেয়েশিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে আপত্তিকর ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলা থেকে শুরু করে নানা ছলে তাদের শরীরে হাত দেওয়া পর্যন্ত ঘটনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে হামেশাই ঘটে বলে অভিযোগ রয়েছে। ছেলেশিক্ষার্থীরাও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে বিভিন্ন মাদ্রাসা ও স্কুলে। নির্যাতন সম্পর্কিত স্পষ্ট ধারণা না-থাকা, নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, যুক্তিসংগত অভিযোগ জানাবার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অনুপস্থিতি, অভিযোগ জানাবার পর অভিযোগকারীর নিরাপত্তার অভাব, শিক্ষকগণ কর্তৃক নানামাত্রিক হুমকি, শিক্ষার্থীদের সাথে অভিভাবকদের সহজ সম্পর্ক না-থাকা, সমাজ ও অভিভাবকগণ কর্তৃক মেয়েদের ওপরে দোষ চাপানোর পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, সমাজে প্রচলিত সনাতনী এবং পুরুষতান্ত্রিক চেতনা উদ্ভূত লজ্জাবোধ, ইত্যাদি কারণে এসব ঘটনা প্রায়ই প্রকাশিত হয় না। আমরা ধারণা করি, প্রাইভেট, কোচিংক্লাস ও বিশেষ তত্ত্বাবধানের নামে শিক্ষার্থীদের একা পাবার সুযোগ নিয়ে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ এক শ্রেণির শিক্ষকদের দ্বারা যে পরিমাণ ধর্ষণ/বলাৎকারের ঘটনা ঘটে থাকে, তার বেশিরভাগই অপ্রকাশিত থেকে যায়।

স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সকল ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন ও সমানাধিকার কায়েমের লক্ষ্যে মেয়েরা যখন শিক্ষায় ব্যাপকভাবে অগ্রসর হয়ে এসেছে, যখন তারা একের পর এক সাফল্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে, তখন এই ধরনের ঘটনা আমাদের এই অর্থেও উদ্বিগ্ন করে তুলে যে, এতে অনেক অভিভাবক তাদের মেয়েদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়ে বাল্যবিয়েতে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারেন। এতে যে শুধু ওই মেয়েদেরই ক্ষতি হবে তা নয়, বরং ক্ষতিগ্রস্ত হবে নারীসমাজসহ গোটা জাতি। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন প্রতিরোধে মহামান্য হাইকোর্ট প্রদত্ত নির্দেশনামূলক নীতিমালা অনুসরণ বাধ্যতামূলক করার ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এজন্য একইসঙ্গে শিক্ষা, আইন এবং নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা জারি করাসহ জারিকৃত আইন ও নির্দেশনা কার্যকর করারও দাবি জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, সকল স্তরের শিক্ষালয়ে যৌন হয়রানি বন্ধ করার পরিবেশ তৈরির জন্য অনতিবিলম্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জরুরিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
আশা করি আপনারা জানেন যে, গত ২৬ জুন ২০১১ রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রাজারামপুর কাশীগঞ্জে দুই গৃহবধূ সাইদা ও হ্যাপীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তথাকথিত সালিশের নামে পাশবিক কায়দায় অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হয়েছে। দুটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে নির্যাতনের দৃশ্য সম্বলিত খবর প্রচারের পর চেয়ারম্যানের লোকজন প্রভাব খাটিয়ে একজন নির্যাতিতের মুখ থেকে তার ওপরে কোনো নির্যাতন করা হয় নি বলিয়ে নিয়ে তাদের দুজনকেই গ্রামছাড়া করে দিয়েছে, যারা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। শুধু তাই নয়, ‘একুশের চোখ’-এর অনুসন্ধানী দল এ ঘটনার ফলোআপ খবর সংগ্রহে গেলে চেয়ারম্যানের লোকজন পুরো দলটির ওপর হামলা চালিয়ে চারজনকে মারাত্মকভাবে আহত করে। খবরে প্রকাশ, স্থানীয় পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করলেও ঘটনার মূল হোতা ইউপি চেয়ারম্যানকে এখনো গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় নি।

ঘটনার এই গতিপ্রকৃতিতে নারীসমাজ বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। নারীনীতিবিরোধী যে অপশক্তিকে আমরা রাজপথে বুকে পবিত্র কোরানশরিফ বেঁধে মিছিল করতে দেখেছি, ওই গোষ্ঠীটি নারীর বিরুদ্ধে যে ধরনের নির্যাতনের সংস্কৃতি দেশে চালু রাখতে চায়, এ ঘটনায় যেন আমরা তারই
বাস্তবায়ন দেখলাম। কিন্তু আমরা ভেবে পাই না, স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় সালিশের নামে নারীর বিরুদ্ধে জঘন্য ফতোয়া কার্যকর করেও ফতোয়াবাজরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে একটি গ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলে কীভাবে? এ ধরনের ঘটনা যেন দেশে আর একটিও না-ঘটে সে ব্যবস্থা করবার জন্য আমরা বিশেষভাবে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।   

প্রিয় বন্ধুরা,
আমরা আজ শুধু ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল বা রংপুরের বদরগঞ্জের ঘটনার কথাই এখানে বলতে আসি নি। আমরা সামগ্রিকভাবে পরিবার, কর্মস্থল, শিক্ষাঙ্গন, রাস্তাঘাটসহ সর্বত্র নারীর প্রতি সংঘটিত নির্যাতন, নিপীড়ন ও হয়রানির ঘটনার যে বিস্তৃতি, তার প্রশমনে সমাজ ও সরকারের প্রতি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথাই মূলত বলতে এসেছি। আমরা এখানে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সিমলা দীঘিপাড়া গ্রামের আদিবাসী নারী মরিয়ম মুর্মুর ধর্ষণ ও হত্যার কথা বলতে পারি, মতিঝিলে স্বামীর পিটুনিতে নিহত স্ত্রীর কথা বলতে পারি, নারায়ণগঞ্জে সিঙ্গাপুর প্রত্যাগত প্রবাসী নারীশ্রমিককে গণধর্ষণের পর আগুন দিয়ে পোড়ানোর কথা বলতে পারি; কিন্তু এরকম পাঁচ-দশটি ঘটনার কথা বলে এই অব্যাহত নির্যাতন ও মৃত্যুমিছিলের পুরো বর্ণনা দেওয়া সম্ভব নয়। এরকম নিপীড়নঘটনা সারাদেশে প্রতি মুহূর্তেই ঘটছে, যার প্রকৃত কোনো হিসেব কারো কাছেই নেই। অথচ এসব নির্যাতন ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও শাস্তি প্রদান কিংবা এ ধরনের সম্ভাব্য ঘটনা প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয়-সামাজিক পদক্ষেপ গ্রহণের দৃষ্টান্ত আমরা খুব কমই স্থাপন করতে পেরেছি ও পারছি।

বন্ধুগণ,
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, নারী নির্যাতনের কারণে প্রতিবছর দেশের জিডিপির ২.০৫ শতাংশ অর্থ অপচয় হয়, যা জাতীয় বাজেটের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতের মোট বরাদ্দের সমান। এ পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় নির্যাতন-সংশ্লিষ্টদের চিকিৎসা, মামলা-মোকদ্দমা, সালিশ, সামাজিকতা রক্ষা এবং সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নারী নির্যাতনবিরোধী সচেতনতা কর্মসূচি চালাতে। তার মানে হলো, নারীর প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন, নিপীড়ন, হয়রানি, ধর্ষণ, অ্যাসিড নিক্ষেপ, ফতোয়া, মৌখিক হয়রানি, মানসিক নির্যাতন চূড়ান্ত বিচারে শুধু নির্যাতন-সংশ্লিষ্টদেরই ক্ষতি করে না, বরং সমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে সমাজের সকল নারী-পুরুষ ও শিশুকে। আমরা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই এই ভয়ংকর অমানবিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক অপচয় থেকে দেশ ও দেশের মানুষের মুক্তি চাই। এ অবস্থা কোনো সুস্থ সমাজের জন্যই কাম্য হতে পারে না। আমরা দৃঢ়ভাবে এমন অবস্থার অবসান চাই। এই অনাকাক্সিক্ষত অবস্থার পরিবর্তনের জন্য আমরা নিচের দাবি ও আহ্বান আপনাদের মাধ্যমে সরকার ও দেশবাসীর সামনে তুলে ধরছি :

  • ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ধর্ষক-শিক্ষক পরিমল জয়ধর এবং তার সহযোগী ও প্রশ্রয়দানকারী, রংপুরের দুই গৃহবধূর ওপর নির্যাতনকারী ইউপি চেয়ারম্যানসহ সকল সালিশকার, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আখাউড়ার যৌন নিপীড়নকারী শিক্ষক, গোদাগাড়ী উপজেলার আদিবাসী নারী মরিয়ম মুর্মুর ধর্ষক ও হত্যাকারী, অধ্যাপক রুমানা মনজুরের নিপীড়ক স্বামীসহ সম্প্রতি ও অদূর অতীতে সংঘটিত সকল নারী নির্যাতন ঘটনার অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
  • সকল স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনতিবিলম্বে যৌন নিপীড়ন বিরোধী পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা চালু করতে হবে।
  • যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে দেওয়া হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। কর্মস্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জেন্ডার-সংবেদনশীল চাকুরিবিধি, আচরণবিধি বা কোড অব কন্ডাক্ট প্রণয়ন করতে হবে, যাতে এসব প্রতিষ্ঠান থেকেই অপরাধীর শাস্তির ব্যবস্থা করা যায়।
  • শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জরিপ পরিচালনা করে শিক্ষার্থীদের সাথে আপত্তিকর আচরণকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি দপ্তর ও নির্দিষ্ট সংখ্যক নারীকর্মী সম্বলিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারীকর্মীদের পারিবারিক নির্যাতনসহ যেকোনো ধরনের হয়রানি, নিপীড়নমূলক সংঘটিত ও সম্ভাব্য ঘটনায় তাদেরকে সহায়তা ও পরামর্শ দেবার মতো প্রাতিষ্ঠানিক পেশাদারি ব্যবস্থা সারাদেশেই প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
  • দেশে প্রচলিত নারী নির্যাতনবিরোধী আইনসমূহ কেন কার্যকর করা যাচ্ছে না তার কারণ চিহ্নিত করার জন্য মনিটরিং করা ও সে অনুযায়ী আইনগুলো কার্যকর করার জন্য বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসন এবং বিচারব্যবস্থাকে নারীসংবেদী করে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণের আয়োজন করে সংবিধানোক্ত নারী অধিকার, নারী-পুরুষ সমতা, নারী নির্যাতনবিরোধী আইন ও আন্তর্জাতিক সনদ সম্পর্কে প্রায়োগিক ধারণা দেওয়া ও প্রয়োগে ব্যর্থ হলে তাদের বিচারের আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • সকল নারী নির্যাতন ঘটনার শিকার ও তাদের প্রত্যেকের পরিবারের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • নিপীড়নের শিকার নারী ও তার পরিবারের জন্য মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা পরিষেবার ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
  • নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটায় এমন ধরনের নাটক-গান-বিজ্ঞাপন-বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান প্রচার থেকে গণমাধ্যমকে (রেডিও-টিভি-সংবাদপত্র) বিরত রাখতে কার্যকর সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
  • সরকারি-বেসরকারি মালিকানাধীন সকল রেডিও-টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রের জন্য নারী নির্যাতন প্রতিরোধের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ জনসচেতনতামূলক (নারী-পুরুষ সমতা সম্পর্কিত সাংবিধানিক ধারা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধের উপায়, প্রচলিত আইন, আইনে কথিত শাস্তি ইত্যাদি) সরকারি ও বেসরকারি বিজ্ঞাপন বিনা খরচে প্রচার করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। আইনি বাধ্যবাধকতা ছাড়াও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য আমরা সংবাদমাধ্যকে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এগিয়ে আসার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
  • নারী নির্যাতনের সকল ঘটনাকে শহর-গ্রাম-ধনী-গরিব-পেশা ও সামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে সমভাবে, সমগুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
বন্ধুরা,
আমরা মনে করি, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আমরা সবাই ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারি। নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন আনার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে এক্ষেত্রে। নারীর ওপর নির্যাতন আসলে চূড়ান্ত বিচারে আমাদের সবার ওপর নির্যাতন। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে দরকার সনাতনী ‘সামাজিক সম্মান’, ‘পারিবারিক মর্যাদা’, ‘দুর্নাম’ ইত্যাদি চিন্তার বাইরে বেরিয়ে নির্যাতন প্রতিরোধে সরব হওয়া, এর প্রতিবাদে মুখ খোলা, সংগঠিত হওয়া এবং অবিলম্বে সরকারি ব্যবস্থাদি ও নিকটজনের সহায়তা চাওয়া। নারীর উপর নিপীড়ন প্রতিরোধে পর্যাপ্ত রাষ্ট্রীয় সহায়তার অভাব এবং নাগরিকদের নিষ্ক্রিয়তা নির্যাতক-নিপীড়কদের বল্গাহীন বেড়ে ওঠাকে উৎসাহিত করে।

শিক্ষার্থী ও নারীর উপর নিপীড়নকারীদের প্রতিহত করার প্রধানতম দায়িত্ব সরকারের। আমরা আশা করি সরকার কার্যকর ব্যবস্থাদি নিশ্চিত করে সর্বস্তরের মানুষকে সকল ধরনের নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলে সরকারি ব্যবস্থাকে স্থায়িত্ব প্রদানের সহায়ক শক্তিতে পরিণত করার ইতিবাচক পরিবেশ রচনা করবে। সাধারণ নাগরিক এবং সরকারের মিলিত শক্তিই কেবল পারে নারীর জন্য একটি গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে। নারীর জন্য সেই পরিবেশই আমাদের কাম্য।

আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

নারীসমাজের পক্ষে

রোকেয়া কবীর
নির্বাহী পরিচালক
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ

এই ইভেন্টের ফটো অ্যালবাম ফেসবুকে

2 comments:

লেখাটি সম্পর্কে আপনার মত জানান (যদি থাকে)